কম্পিউটার গ্রীক শব্দ কমপিউট (Compute) থেকে এসেছে, যার অর্থ গননা। কেউ কেউ আবার বলেন ল্যাটিন শব্দ কম্পিউটেয়ার (Computare) থেকে এসেছে এর অর্থও গননা। এই দুটো শব্দের যেকোন একটা থেকে কম্পিউটার শব্দটি এসেছে। কমপিউট (Compute) থেকে অথবা কম্পিউটেয়ার (Computare) থেকে কম্পিউটার (Computer) যার অর্থ গণনাকারী। অর্থাৎ কম্পিউটার একটি গণনাকারী যন্ত্র।
অথচ কম্পিউটার দিয়ে গান বাজনা শুনতে পারি, বিভিন্ন সিনেমা উপভোগ করতে পারি। গেম খেলতে পারি, টাইপিং করতে পারি এমনকি অনেক বড় বড় বৈজ্ঞানিক গবেষনা করা হয়। তাহলে কি কম্পিউটার শব্দের অর্থ গণনাকারী এটা মিথ্যা? সাধারন ভাবে মিথ্য মনে হবে। আমরা অডিও গান শুনি, ভিডিও দেখি বা অন্য যেকোন কাজ করি কম্পিউটার জিরো (০) এবং ওয়ান (১) এর বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব কাজ সম্পন্ন করে থাকে। সত্যিকার অর্থে কম্পিউটারের যাবতীয় কাজ গণনা অর্থাৎ জিরো (০) এবং ওয়ান (১) এর বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করে থাকে। সুতরাং কম্পিউটার একটি গণনাকারী যন্ত্র। আপনারা যারা উচ্চ মাধমিক ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ তৃতীয় অধ্যায় এর দ্বিতীয় অংশ (ডিজিটাল ডিভাইস) স্টাডি করছেন তারা সহজে বুঝতে পারবেন কিভাবে লজিক গেটের সাহায্যে কম্পিউটার কাজ করে থাকে।
কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র। এটি অনেকগুলো যন্ত্রের সমন্বয়ে গঠিত। যেমন কী – বোর্ড, মাউস, মনিটর, প্রসেসর, ইত্যদি। কিছু যন্ত্র বাইরে থেকে ডাটা গ্রহন করতে সাহায্য করে,
যেমন কী - বোর্ড। কিছু যন্ত্র গ্রহনকৃত ডাটাকে প্রসেস (প্রক্রিয়াকরণ) করে,
যেমন র্যাম,
প্রসেসর। কিছু যন্ত্র কম্পিউটার হতে ডাটা বাইরে সরবরাহ করে, যেমন মনিটর, প্রিন্টার। অনেকেই বলে কম্পিউটার মানুষের সাথে তুলনা করে তৈরি করা হয়।
নিচের উদাহরনটি ধারনা স্পষ্ট করবে।
ধরুন আপনার গায়ে মশা কামড় দিল – আপনি কি করবেন? চট করে যেখানে কামড় দিছে সেখানে নিজে নিজে আঘাত করে মশাকে তাড়াবেন। মশা কামড় দেওয়া এবং তাড়ানো এর মধ্যে কি কি ঘটে। মশা কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে মশা কামড়ের তথ্য আপনার শরীরের নিউরন বা নার্ভ সিস্টেম (স্নায়ুতন্ত্র) অতি দ্রুত (ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে) ডাটা মস্তিষ্কে পাঠাবে, মস্তিষ্ক ঐ ডাটা প্রসেস করার পর সংশ্লিষ্ট অঙ্গকে নির্দেশ প্রদান করবে। এর ফলে হাত দিয়ে আঘাত করে মশা তাড়াবেন। অল্প সময়ের মধ্যে মোট তিনটি ঘটনা ঘটবে –
এক : মশার দ্বারা ডাটা ইনপুট
দুই : মস্তিষ্কে ইনপুট কৃত ডাটার প্রসেস বা প্রক্রিয়াকরণ।
তিন : ফলাফল হিসেবে নিজের শরীরে আঘাত করে মশা তাড়ানো।
কম্পিউটার ঠিক মানুষের মতো করে কাজ করে। ইনপুট যন্ত্রের সাহায্যে ডাটা গ্রহন করবে, প্রসেসিং যন্ত্রের সাহায্যে ঐ ডাটাকে প্রসেস করবে। প্রসেস করার পর প্রসেসিং এর ফলাফল অনুযায়ী আউটপুট যন্ত্রের সাহায্যে ফলাফল প্রদান করবে। মনে করা যাক – আমার কম্পিউটারে একটা চিঠি টাইপিং করে রেডি করা আছে। আমি ঐ টিঠিটা প্রিন্ট করতে চাই। তাহলে আমি কি করবো? প্রথমে কাঙ্খিত চিঠির ফাইলটি রান (ওপেন) করবো। এরপর মাউস অথবা কীবোর্ডের সাহায়্যে কম্পিউটারে প্রিন্ট করার নির্দেশ প্রদান করবো। মাউসের ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসরে বিশ্লেষণ করবে। প্রসেসিং সিস্টেম ডাটা বিশ্লেষণ করে প্রিন্টার কে প্রিন্ট করতে বলবে। প্রিন্টার যদি ঠিক থাকে তাহলে প্রিন্ট পেয়ে যাবো।
কম্পিউটারের সঙ্গা :
কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র বা ডিভাইস। যাহা ইনপুট হিসেবে ডাটা গ্রহন করে, গ্রহনকৃত ডাটা প্রসেসিং করে এবং প্রসেস করার পর আউটপুট হিসেবে ফলাফল প্রদান করে।
ইংরেজি সঙ্গা :
A computer is an electronic device. Which
receives data as input, processes the data received, and returns the output as
the output after processing.
১.২
কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য (Characteristic
of Computer)
কম্পিউটার একটি যন্ত্র। কম্পিউটারের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য কম্পিউটারকে করেছে অপ্রতিদ্বন্ধী যন্ত্র। বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার সর্বশ্রেষ্ট যন্ত্র। কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য গুলো উল্লেখ করা হলো
-
ক) দ্রূতগতি (High Speed):
কম্পিউটার অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কাজ করে। এই দ্রুতগতির কারন এটা কাজ করে বৈদ্যুতিক সংকেতের মাধ্যমে। এর দ্বারা অতি অল্প সময়ে বিপুল ডাটা প্রক্রিয়াকরন করা সম্ভব। কম্পিউটার দ্রুতগতি সম্পন্ন গণনার কাজকে মিলিসেকেন্ড, মাইক্রোসেকেন্ড, ন্যানোসেকেন্ড, পিকো সেকেন্ড ইত্যাদি এককে হিসেব করা হয়। কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে ২ থেকে ৪ মিলিয়ন গাণিতিক কার্যাবলী সম্পন্ন করতে পারে।
১০ -৩ = মিলি, ১০ -৬ = মাইক্রো, ১০ -৯ = ন্যানো, ১০ -১২ = পিকো।
অর্থাৎ এক সেকেন্ড ১০০ কোটি ভাগ করলে যে ক্ষুদ্র সময় হয় তাকে এক ন্যানো সেকেন্ড বলে। মানুষ কোন কাজ কত সময়ে শেষ করে তা নির্ণয় করে ঘন্টা, মিনিট বা সেকেন্ডে। এর চেয়ে ক্ষুদ্র সময়ের একক নাই।
খ) বিশ্বাসযোগ্যতা (Reliability):
কম্পিউটার দ্রুতগতিতে কাজ করলেও তার কাজ র্নিভূল। কম্পিউটার সব সময় নির্দিষ্ট কাজ র্নিভূলভাবে করে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রোগ্রাম বা ডাটা ১০০% শুদ্ধ হতে হবে। আধুনিক কম্পিউটার প্রমাণ করে যে মানুষ ভুল করে কিন্তু কম্পিউটার ভুল করেনা।
গ) স্মৃতি বা মেমরি (Memory) :
কম্পিউটারের স্মৃতি অতি বিশাল, বিপুল পরিমান ডেটা ও নির্দেশ এতে জমা রাখা যায়। মেমরি থেকে কোন ডেটা খুঁজে বের করতে কম্পিউটারের সময় লাগে ১ন্যানো সেকেন্ড বা তারও কম।
আমরা ফেসবুকে, ইউটিউবে ইত্যাদি সোস্যাল মিডিয়ায় জনে জনে প্রতিদিন হাজার হাজার পরিমান ডাটা অপলোড করি। এই ডাটা গুলো অবশ্যই কম্পিউটারে জমা থাকে। সুতরাং কম্পিউটারের মেমরী বিশাল। তবে এই কম্পিউটারগুলোকে সার্ভার কম্পিউটার বলে।
ঘ) সুক্ষ্মতা
(Accuracy):
কম্পিউটার প্রক্রিয়াকরণের ফলাফল সুক্ষ্মভাবে দিতে পারে যা মানুষের পক্ষে প্রায়ই অসম্ভব। কম্পিউটারের কাজের মূলনীতি গণিতের সূত্র নির্ভর, অনুমান নির্ভর কোন কিছু করে না। গাণিতিক হিসেবের ক্ষেত্রে এটি অনেক দশমিক স্থান পর্যন্ত ফলাফল দিতে সক্ষম।
ঙ) ক্লান্তিহীনতা
(Diligence) :
দীর্ঘক্ষণ একটানা কাজ করলেও কম্পিউটার ক্লান্ত হয় না বা গণনায় ভুল করেনা। কিন্তু মানুষের ক্লান্তি আছে, অবসাদ আছে।
ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি সাইটে (সন্ধায়, গভীর রাতে, সকালে) যেকোন সময় লগিন করা যায়। এইসব সোস্যাল সাইট সহ যেকোন ওয়েব সাইট কোন কম্পিউটারে
জমা থাকে। ঐসব কম্পিউটার প্রায় সব সময় চালু থাকে। অর্থ্যাৎ ঐসব কম্পিউটারের
ক্লান্তি নাই।
চ) যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত
(Logical Decision):
কম্পিউটার যে শুধু বিভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করে তা নয়,
সেই সাথে লজিক প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করতে পারে এবং বিভিন্ন ব্যাপারে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এখন মাঘ মাস খুব শীত কিন্তু আজ সকাল সকাল ঝলমলে রোদ। তাহলে আমি কি ভারী শীতের কাপড় পড়বো, অবশ্যই
না। হালকা শীতের কাপড় পড়বো। এটাই যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত।
আমি বিয়ে করতে চাই- (০১) আমার সঙ্গীকে সুন্দর হতে হবে, (০২) সরকারি চাকুরী থাকতে হবে। এই দুইটা বৈশিষ্ট্য অবশ্যই থাকতে হবে। ঘটক প্রস্তাব নিয়ে আসলো কোটিপতির সন্তান। কিন্তু সরকারি চাকুরি নাই। তাহলে আমি কি বিয়ে করবো? অবশ্যই না। এটাই যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত।
এক্সেলে শিখবো। ৮০% বা তার বেশী পাইলে ‘এ+’, ৭০% থেকে ৭৯% এর মধ্যে পাইলে
‘এ’, ৬০% থেকে ৬৯%
এর মধ্যে পাইলে ‘বি’ গ্রেড। আমি পাইছি ৭৫% তাহলে আমার গ্রেড পয়েন্ট
হবে ‘এ’। এটাই যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত।
ছ) বহুমুখিতা
(Versatility):
কম্পিউটার এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যার সাহায্যে অনেক ধরনের কাজ সম্পন্ন করা যায়। সাধারন হিসাব নিকাশ থেকে শুরু করে শিক্ষা, চিকিৎসা, জটিল বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান পর্যন্ত সর্বত্রই এই কম্পিউটারের ব্যবহার হচ্ছে। আমি গান শুনতে শুনতে টাইপিং করতে পারছি।
জ) স্বয়ংক্রিয়তা
(Automation):
কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করে থাকে। কম্পিউটার পরস্পর নির্ভরশীল পর্যায় গুলোর কাজ ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করে থাকে অর্থাৎ প্রদত্ত নির্দেশ মতো স্বয়ংক্রিয় ভাবে কম্পিউটার ডেটা প্রক্রিয়াকরণ করে সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
কম্পিউটারে দশটা বা তারও বেশী গান সিলেক্ট করে চালু করে দিলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলতে থাকে। একশো পেজ প্রিন্ট করার কমান্ড দিলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে একশো পেজ প্রিন্ট করে দিবে।
Nice 👍
ReplyDeleteআপনাকে ধন্যবাদ।
Deleteধন্যবাদ স্যার আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি
ReplyDeleteআপনাকে ধন্যবাদ।
Deleteঅনেক সুন্দর হয়েছে... এগিয়ে যান.. চলমান থাকবে আশা রাখি
ReplyDeleteআপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি আপনি পাশে থাকবেন।
Deleteখুব সুন্দর হয়েছে...
ReplyDeleteসামনে এগিয়ে যান....দোয়া রইলো।
আপনাকে ধন্যবাদ।
Deleteআপনাকে ধন্যবাদ।
ReplyDeletevery good
ReplyDeleteঅনেক অনেক ধন্যবাদ, বোদা ময়নাগুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়,তেতুলিয়া, পঞ্চগড়।
ReplyDelete