কম্পিউটারের সাহায্যে সমস্যা সমাধান বা কার্য সম্পাদনের জন্য কম্পিউটারে ভাষায় ধারাবাহিক ভাবে সাজানো নির্দেশসমূহকে প্রোগ্রাম বলে। প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রাম সমষ্টি কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে হার্ডওয়্যারকে কার্যক্ষম করে এবং কার্যসম্পাদন বা সমস্য সমাধান করে তাকেই সফটওয়্যার বলে।
কম্পিউটারের সাহায্যে সমস্যা সমাধান করাই সফটওয়্যারের কাজ। বেশীর ভাগ সময় একাধিক প্রোগ্রামের সমষ্টি সফটওয়্যার। মাঝে মাঝে একটি প্রোগ্রামও সফটওয়্যার হতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন সফটওয়্যার ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা সমাধান করে। অনেকে সফটওয়্যারকে প্রোগ্রামও বলে।
মনে করুন একজন কৃষক বেগুন চাষাবাদ করবেন। কৃষকের সমস্যা বেগুন চাষাবাদ করা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষককে ধারাবাহিক ভাবে যে কাজগুলো করতে হতে তা হলো –
ক) জমি তৈরি : প্রথমে জমি তৈরি করতে হবে। জমি তৈরি করার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম বা কমান্ড আছে। গরুর হাল দিয়ে হাল চাষ করতে হবে। আইল গুলো সাইজ করতে হবে। ইত্যাদি। জমি তৈরি একটা প্রোগ্রাম।
খ) চারা রোপন : নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে বেগুনের চারা রোপন করতে হবে। যেমন একটা চারা থেকে আর একটা চারার দুরত্ব কত টুকু। ইত্যাদি নিয়মগুলো বা নির্দেশ বা কমান্ডগুলো একসাথে একটা প্রোগ্রাম।
গ) পরিচর্যা : ফসল পরিচর্যা করতে হবে। সেচ প্রদান, আগাছা নিড়ানো, সার বা বিষ প্রদান। অবশ্যই ফসল পরিচর্যা একটা নির্দিষ্ট নিয়ম বা কমান্ড অনুসারে করতে হবে। এটাও একটা প্রোগ্রাম।
ঘ) ফসল তুলা : সবশেষে ফসল তুলতে হবে। অবশ্যই প্রত্যেকটি আলাদা আলাদা ফসল তুলার নিয়ম বা কমান্ড আলাদা আলাদ। ফসল তুলার নির্দেশ বা কমান্ডকে একসাথে একটা প্রোগ্রাম হিসেবে কল্পনা করতে পারি।
প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম ধারাবাহিক ভাবে সম্পাদন করতে হবে। যেকোন একটি প্রোগ্রাম এর ব্যতয় ঘটলে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যাবে না। সবগুলো প্রোগ্রাম কে একসাথে সফটওয়্যর বলে।
আমার কম্পিউটারে অনেক গুলো অডিও গান আছে, আমি তা
চালাতে চাই বা শুনতে চাই। আমার সমস্যা হলো গান শুনতে চাওয়া। অডিও প্লেয়ার বা মিউজিক
প্লেয়ার ইনস্টল করে গান শুনতে পারবো বা গান শুনতে চাওয়ার যে সমস্যা তা দূর হবে। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানের
জন্য প্রোগ্রামার বা কম্পিউটার ইন্জিনিয়াররা সফটওয়্যার তৈরি করবেন। প্রোগ্রামার প্রথমে ফ্লো
চার্ট তৈরি করবেন এরপর ছোট ছোট প্রোগ্রাম রচনা করবেন এরপর প্রোগ্রামগুলো সমন্বয় করে
পূর্নাঙ্গ সফটওয়্যার তৈরি করবেন। প্রোগ্রামার কর্তৃক তৈরি কৃত সফটওয়্যার কম্পিউটারে ইনস্টল
এর ফলে আমার গান শুনতে চাওয়ার সমস্যা সমাধান হবে।
সফটওয়্যারের শ্রেণিবিভাগ
বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সফটওয়্যারের শ্রেণিবিভাগ করা যায়। কাজের প্রকৃতি বা ফাংশন অনুসারে কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রধানত দুই প্রকার। যথা –
ক) সিস্টেম সফটওয়্যার (System Software)
প্রথমে আলোচনা করা যাক সিস্টেম কাকে বলে। কোন অফিস সম্পর্কে আমরা প্রায় বলতে শুনি ঐ অফিসের সিস্টেমটাই এরকম। ঘুষ ছাড়া কোন কাজই হয় না। একটা অফিস কাজ করার জন্য যতগুলো উপাদান সবুগলোকে একসাথে সিস্টেম বলে। অফিসের আসবাবপত্র, অফিসের পিয়ন, অফিসের অফিসার সবগুলো একসাথে সিস্টেম। শেখ পারিবারের বড় ছেলে চাকুরী করে, ছোট ছেলে রাজনীতি করে। তারা প্রতিদিন রাতের খাবার রাত দশটায় শেষ করে। ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে ওঠে। গরীবের যথাসাধ্য সহযোগিতা করে। আমরা তখন বলি শেখ পরিবারের সিস্টেম অনেক ভালো। শেখ পরিবার সমস্থ উপাদান একসাথে সিস্টেম এবং পরিবারের নিয়মনীতি বা পরিচালনার পদ্ধতিকে সফটওয়্যার বলা যেতে পারে।
কম্পিউটারের ক্ষেত্রে একটি কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইস, প্রসেসিং ডিভাইস, আউটপুট ডিভাইস, সফটওয়্যার সবগুলো উপাদানকে একসাথে কম্পিউটার সিস্টেম। এ সিস্টেমকে পরিচালনা করার জন্য যে নীতিমাল বা নির্দেশনা বা যে সফটওয়্যার তাকে সিস্টেম সফটওয়্যার বলা হয়। ডিজিটাল যন্ত্রের বা কম্পিউটারের হার্ডওয়ার সমূহকে কাজের উপযোগী করা, এপ্লিকেশন সফটওয়ার চালানোর জন্য প্লাটফর্ম তৈরি করা কম্পিউটারের বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং হার্ডওয়ার এর মাঝে সমন্বয় সাধন করা,
আপনার দেয়া বিভিন্ন নির্দেশনা অনুযায়ী হার্ডওয়ার কে পরিচালনা করা,
কম্পিউটার কে কি করতে হবে,
কিভাবে করতে হবে এসব আদেশ দেয়ার জন্য যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তাকে সিস্টেম সফটওয়ার বলে। আরও সহজ কথায় বললে কম্পিউটার সিস্টেমকে পরিচালনা করার জন্য যে সফটওয়্যার তাকে সিস্টেম সফটওয়ার।
খ) অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার (Application
Software)
অ্যাপ্লিকেশন এর বাংলা হচ্ছে আবেদন করা। তার মানে কোন কিছু চাওয়া। আবেদন পত্রের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সমস্যার সামধান চাওয়া হয়। ধরা যাক রহিম হেডমাস্টারের কাছে দরিদ্র তহবিল থেকে অর্থ সহায়তা চেয়ে আবেদন করলো। তার মানে রহিমের অর্থিক সমস্যার সমাধান চাইলো। হেড মাস্টার কোষাধ্যক্ষকে রহিমের সমস্যা সমাধান করার জন্য বলে দিল। করিম তার বোনের বিয়ের জন্য হেডমাস্টারের কাছে ছুটির আবেদন করলো। হেডমাস্টার তার ক্লাশ টিচারকে সমস্যাটি সমাধান করার জন্য বলে দিল। আলাদা আলাদা পারসনের সমস্যা সমাধানের জন্য আলাদা আলাদা পারসন বা সফটওয়্যার। এটাই হচ্ছে ব্যবহারিক সফটওয়্যার।
ব্যবহারকারী তার ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের জন্য যে সফটওয়্যর ব্যবহার করে তাকে ব্যবহারিক বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে। যেমন Ms Word (Word Processor), Ms Excel (Spread sheet),
Windows media player (Music Player), যদি কারও ডকুমেন্ট (চিঠিপত্র) তৈরি করার প্রয়োজন হয় তাহলে Ms Word ব্যবহার করবে। কেউ যদি কম্পিউটারের গান শুনতে চাই তাহলে Windows media
player ব্যবহার করবে। কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের উপর সিস্টেম সফটওয়্যার ইনস্টল করার পর যার যা দরকার সে অনুসারে ব্যবহারিক সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হবে। তবে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে বিল্টইন কিছু অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার দেওয়া থাকে।
ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে সফটওয়্যারকে মোট তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা –
ক) বাণিজ্যিক সফটওয়্যার : মানুষের প্রয়োজনকে উপলব্ধি করে সে অনুযায়ী সফটওয়্যার তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারে বা অথের্তর বিনিময়ে বিক্রয় করে। এ সকল সফটওয়্যারকে বাণিজ্যিক সফটওয়্যার বলে। যেমন মাইক্রোসফট কর্পোরেশন অর্থের বিনিময়ে বাজারে মাইক্রোসফট অফিস বা অন্যান্য সফটওয়্যার বিক্রয় করে থাকে। বাণিজ্যিক সফটওয়্যার কপি ব্যবহার করা অনৈতিক কাজ এবং তা আইনত: দন্ডনীয়।
খ) ফ্রিওয়্যার বা ওপেন সোর্স : অনেক প্রোগ্রামার বা প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার সর্বসাধারনের ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। এ সকল সফটওয়্যারকে বলা হয় ফ্রিওয়্যার। যে কেউ ফ্রিওয়্যারের সোর্স কোড পেতে পারেন এবং তা উন্নয়ন করে নিজে ব্যবহার কিংবা জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারেন।
ফ্রিওয়্যার সবার জন্য উন্মুক্ত। কাজেই যে কেউ এর কপি কোন খরচ ছাড়াই ব্যবহার করতে পারেন। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিওয়্যার সংগ্রহ করা যেতে পারে।
গ) শেয়ারওয়্যার : শেয়ারওয়্যার অনেকটা ফ্রিওয়্যারের মতই তবে সামান্য রেজিষ্ট্রেশন ফি এর বিনিময়ে সংগ্রহ করে ব্যবহার করতে হয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে শেয়ারওয়্যার সংগ্রহ করা যায়।
১.৫.৩ ফার্মওয়্যার (Firmware)
একটি উদাহরণ দিয়ে বলি - বাজার থেকে যখন একটি CD ড্রাইভ (সিডি মেশিন) কিনে আনা হয়। আপনার কম্পিউটারটি কিভাবে নতুন এই CD টির সাথে যোগাযোগ করছে? আসলে কম্পিউটারটি কিছু তারের মাধ্যমে CD ড্রাইভটির সার্কিটবোর্ডের মধ্যে রাখা একটি সফটওয়্যারের সাথে কথা বলে, কম্পিউটারের সাথে CD ড্রাইভ কিভাবে কাজ করবে তা এই সফটওয়্যারের মধ্যে থাকে - এবং সেই সফটওয়্যারটিকেই বলা হয় ফার্মওয়্যার | ডিভাইস তৈরি করার সময় কোম্পানী ফার্মওয়্যার সেট করে দেন। অনুরূপ ভাবে মাউসের মধ্যে, কীবোর্ডের মধ্যে ফার্মওয়্যার সেট করা থাকে।
ফার্মওয়্যার এক প্রকার সফটওয়্যার। সফটওয়্যার যেকোন প্রোগ্রামার তৈরি করে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু ফার্মওয়্যার যেকেউ তৈরি করতে পারে না। কম্পিউটার বা কম্পিউটার যন্ত্রাংশ তৈরির সময় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান উহার মেমরীতে কিছু প্রোগ্রাম স্থায়ী ভাবে সংরক্ষণ করে দেয় তাকে ফার্মওয়্যার বলে।
সংশ্লিষ্ট ডিভাইস বা যন্ত্রটি কিভাবে কম্পিউটারের সাথে কাজ করবে তার নির্দেশাবলী ফার্মওয়্যারের মধ্যে সংরক্ষিত থাকে। শুধু কম্পিউটার নয়,
হাই-টেক ডিজিটাল সরঞ্জাম মানেই তার একটি ফার্মওয়্যার আছে। যে কোন ডিজিটাল ডিভাইস চালু করার সময় আটোমেটিক কিছু লগো বা বার্তা আসে। এই লগো বা বার্তা ফার্মওয়্যারের কারনে। স্মার্টফোন চালুর সময় কিছু বার্তা ডিসপ্রে হয় এবং ডিসপ্রেটি বিভিন্ন কালার রঙিন করে তারপর চালু হয়। এটাও ফার্মওয়্যারের কারনে।
ফার্মওয়্যারের ডাটা শুধু পড়া যায় এই ডাটা এডিট বা সম্পাদন করা যায় না। ফার্মওয়্যারে প্রবেশ অধিকারও থাকে না।
Thank
ReplyDelete