মানুষের কোন কিছু গণনার চেষ্টা থেকে সংখ্যা পদ্ধতির জন্ম হয়েছে। প্রাচীন যুগে মানুষ দলবদ্ধ ভাবে বসবাস করতো এবং দলবদ্ধভাবে শিকার করতো। কোন দল কতগুলো শিকার করলো তা প্রকাশ করার ইচ্ছা থেকেই গণনার জন্ম। শুরুতে মানুষ আঙ্গুল, নুড়ি পাথর,
রশিতে গিট, দেওয়ালে দাগ ইত্যাদি ভাবে গণনা কাজ সম্পাদন করেছেন। সভ্যতার শুরুতে ছোট ছোট গণনা সহজে করা যেত,
সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে বড় বড় গণনার প্রয়োজন দেখা দেয়। গণনার কাজকে স্থায়ীকরনের প্রয়োজন দেখা দেয়। গণনার কাজকে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন, বর্ণ,
ইত্যাদি ব্যবহার শুরু হয়। আবিষ্কৃত হয় সংখ্যা পদ্ধতি।
সংখ্যা পদ্ধতি:
যে পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন বা মৌলিক চিহ্ন ব্যবহার করে সংখ্যা প্রকাশ ও গণনা করা হয় তাকে সংখ্যা পদ্ধতি বলে।
অংক বা ডিজিট:
কোন সংখ্যা লিখে প্রকাশ করার জন্য যেসব সাংকেতিক চিহ্ন বা মৌলিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে ডিজিট বা অংক বলে।
বেজঃ
কোন সংখ্যা পদ্ধতিতে যতগুলো মৌলিক চিহ্ন বা অঙ্ক ব্যবহার করা হয় তার মোট সংখ্যাকে ঐ সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বলা হয়। যেমন – বাইনারী সংখ্যা পদ্ধতির মৌলিক চিহ্ন মোট দুইটি ০ (জিরো)
এবং ১ (ওয়ান)। সুতরাং বাইনারী সংখ্যা পদ্ধতির বেজ দুই।
রেডিক্স পয়েন্ট
একটি সংখ্যা পূর্ণ (Integer) বা ভগ্নাংশ (Fraction) হতে পারে। ভগ্নাংশযুক্ত সংখ্যার মাঝখানে একটি পয়েন্ট থাকে (যাকে আমরা দশমিক বলি) এই পয়েন্টকে রেডিক্স পয়েন্ট বলে। রেডিক্স পয়েন্ট এর পূর্বের অংশকে পূর্ণ অংশ
(Integer) বলে। রেডিক্স পয়েন্ট এর পরের অংশকে ভগ্নাংশ (Fraction) বলে।
সংখ্যা পদ্ধতির প্রকারভেদ
সংখ্যা পদ্ধতি মোট চার প্রকার-
০১। বাইনারী সংখ্যা পদ্ধতি (Binary Number System):
Binary শব্দটি ল্যাটিন শব্দ bini (or two by two) থেকে এসেছে। জর্জ বুলি বাইনারী সংখ্যা পদ্ধতির জনক। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় ইংল্যান্ড গণিতবিদ জর্জ বুলি বাইনারী সংখ্যা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
যে সংখ্যা পদ্ধতির বেস বা ভিত্তি দুই (০২) অর্থ্যাৎ মৌলিক চিহ্ন দুটি তাকে বাইনারী সংখ্যা পদ্ধতি বলা হয়। মৌলিক প্রতীক দুইটি হলো ০ (জিরো)
এবং ১ (ওয়ান)।
Binary Digit (অংক) কে সংক্ষিপ্ত আকারে bit বলা হয়। Binary এর
B এবং Digit এর
it মিলে bit. অর্থ্যাৎ ০ (জিরো)
এবং ১ (ওয়ান)
কে ১ কে আলাদা আলাদা ভাবে bit বলা যায়। উদাহরন – (১০১০১০১)২ । কম্পিউটারের কাজ মূলত বাইনারী ডিজিটের সাহায্যে পরিচালিত হয়।
দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (Decimal Number System):
Decimal শব্দটি ল্যাটিন শব্দ
decem থেকে এসেছে যার অর্থ ten.
যে সংখ্যা পদ্ধতিতে কোন একটি সংখ্যাকে লেখার জন্য ০ থেকে ৯ মোট দশটি অঙ্ক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তাকে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি বলে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন গনণার কাজে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কম্পিউটারের অভ্যন্তরীন কার্যক্রমে এই পদ্ধতির ব্যবহার হয় না। এ পদ্ধতির মৌলিক চিহ্ন গুলো হলো-
০,১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৮,৯। এ জন্য দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত দশ। উদাহরন – (৮৪৫)১০
অকটাল সংখ্যা পদ্ধতি (Octal Number System)
Octal শব্দটি ল্যাটিন শব্দ
octo থেকে এসেছে যার অর্থ Eight. সুইডেনের রাজা ৭ম চার্লস অক্ট্যাল সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন।
যে সংখ্যা পদ্ধতির বেস বা ভিত্তি মোট আটটি প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে অক্ট্যাল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। মৌলিক চিহ্ন গুলো হলো ০,
১, ২, ৩,
৪, ৫, ৬,
৭। এ পদ্ধতিতে ৮ বা ৯ এর কোন অস্তিত্ব নাই । উদাহরন – (৩৫৩৬৭)৮ একটি অক্ট্যাল সংখ্যা এর দশমিক মান = (১৫০৯৫)১০।
হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি (Hexadecimal Number
System)
Hexadecimal শব্দটি গ্রীক শব্দ
Hex (Six) এবং ল্যাটিন শব্দ Decem (ten) থেকে এসেছে।
যে সংখ্যা পদ্ধতির বেস বা ভিত্তি মোট ষোল অর্থ্যাৎ মোট ষোলটি প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তাকে হেক্সাডেসিমেল সংখ্যা পদ্ধতি বলে। মৌলিক প্রতীক গুলো হলো
- ০, ১,
২, ৩, ৪,
৫, ৬, ৭,
৮, ৯, এবং
A, B, C, D, E, F । উদাহরন – (২৩৫AB)১৬ একটি হেক্সাডেসিমাল সংখ্যার এর দশমিক মান
= (১৪৪৮১১)১০।
সংখ্যা পদ্ধতির রুপান্তর
মান ঠিক রেখে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তন হওয়াকে রূপান্তর বলা হয়। যেমন আমি তোমাকে ভালবাসি এটা বাঙালীর ভাষা। কিন্তু কোন ইংরেজি যদি একই অর্থের কথাটি বলতে চাই তাহলে তাকে বলতে হবে I Love You. এ দুটোর কথার অর্থ একই কিন্তু অবস্থা আলাদা। এটা ভাষার রুপান্তর বা ভাবানুবাদ। সংখ্যা পদ্ধতিতে মান ঠিক রেখে এক সংখ্যা পদ্ধতি থেকে অন্য সংখ্যা পদ্ধতিতে রুপান্তর করা যায়।
চিত্রে কলমগুলো গণনা করুন। মোট কয়টি কলম আছে? আপনি খুব সহজেই বলবেন ১২ টি। আমরা দৈনন্দিন জীবনে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির সাহায্যে হিসাব করে থাকি। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ১২ সঠিক। যদি
(১২)৮ টি বলেন তাহলে কিন্তু সঠিক হবে না। দশমিকে (১২)১০ এবং অক্টালে (১২)৮ আলাদা মান বুঝাবে। চিত্রের কলমগুলো অক্টালে প্রকাশ করার জন্য
(১৪)৮ লিখতে হবে। হেক্সাডেসিমেলে (C)১৬ এভাবে প্রকাশ করতে হবে। বাইনারীতে (১১০০)২ এভাবে প্রকাশ করতে হবে। অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হলেও মান কিন্তু একই। মান ঠিক রেখে অবস্থার পরিবর্তন, এটাই হলো রুপান্তর। যেমন ভাবে আমি তোমাকে ভালবাসি = I Love You. অনুরূপ ভাবে চিত্রের কলম গুলোর সংখ্যাগত মান (১২)৮ = (১৪)৮ = (C)১৬ =(১১০০)২ সবগুলোই সঠিক ।
চিত্রে কলমগুলো গণনা করুন। মোট কয়টি কলম আছে? আপনি খুব সহজেই বলবেন ১২ টি। আমরা দৈনন্দিন জীবনে দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির সাহায্যে হিসাব করে থাকি। দশমিক সংখ্যা পদ্ধতিতে ১২ সঠিক। যদি
(১২)৮ টি বলেন তাহলে কিন্তু সঠিক হবে না। দশমিকে (১২)১০ এবং অক্টালে (১২)৮ আলাদা মান বুঝাবে। চিত্রের কলমগুলো অক্টালে প্রকাশ করার জন্য
(১৪)৮ লিখতে হবে। হেক্সাডেসিমেলে (C)১৬ এভাবে প্রকাশ করতে হবে। বাইনারীতে (১১০০)২ এভাবে প্রকাশ করতে হবে। অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন হলেও মান কিন্তু একই। মান ঠিক রেখে অবস্থার পরিবর্তন, এটাই হলো রুপান্তর। যেমন ভাবে আমি তোমাকে ভালবাসি = I Love You. অনুরূপ ভাবে চিত্রের কলম গুলোর সংখ্যাগত মান (১২)৮ = (১৪)৮ = (C)১৬ =(১১০০)২ সবগুলোই সঠিক ।
সংখ্যা পদ্ধতির রুপান্তর দশমিক (ডেসিমেল) থেকে বাইনারী, অক্টাল, হেক্সাডেসিমেল
|
বাইনারী, ডেসিমেল, অকট্যাল, হেক্সাডেসিমেল এই ৪ (চার) ধরনের সংখ্যা পদ্ধতির বিভিন্ন ধরনের রূপান্তর সম্ভব। আমরা এখানে বাইনারী থেকে ডেসিমেল এবং ডেসিমেল থেকে বাইনারী রূপান্তর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিবো। ডেসিমেল বা দশমিক থেকে বাইনারী, অক্টাল, হেক্সাডেসিমেল সংখ্যায় রূপান্তরের জন্য কয়েকটি ধাপ অনুসরন করতে হবে। যেমন-
ধাপ ১: যে সংখ্যা পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে চাই দশমিক সংখ্যাটিকে তার বেজ বা ভিত্তি (যেমন বাইনারী হলে ২ দিয়ে অকট্যাল হলে ৮ দিয়ে হেক্সাডেসিমেল হলে ১৬) দিয়ে ভাগ করতে হবে।
ধাপ ২: ভাগফল সংরক্ষন করতে হবে এবং ভাগফলের পাশে ভাগশেষ লিখে রাখতে হবে।
ধাপ ৩: ভাগফলকে উক্ত বেজ দিয়ে পুনরায় ভাগ করতে হবে। পুনরায় ভাগশেষ লিখে রাখতে হবে।
ধাপ ৪: ধাপ ২ এবং ধাপ ৩ এর পুনরাবৃত্তি করতে হবে যতক্ষন না
ভাগফল শূন্য হয়।
ধাপ ৫: ভাগশেষ গুলোকে শেষ থেকে শুরু পর্যন্ত সাজিয়ে লিখলেই পরিবর্তিত বা রুপান্তরিত সংখ্যাটি পাওয়া যাবে।
উদাহরন হিসেবে বাম পাশের টেবিলের উদাহরনটি লক্ষ্য করি।
সংখ্যা পদ্ধতির রুপান্তর বাইনারী, অক্টাল,
হেক্সাডেসিমেল থেকে (ডেসিমেল) দশমিক
বাইনারী, অক্টাল, হেক্সাডেসিমেল থেকে ডেসিমেল বা দশমিক সংখ্যায় রূপান্তরের জন্য দুইটি ধাপ অনুসরন করতে হবে। যেমন-
ধাপ ১: সংখ্যাটির (বাইনারী, অক্টাল, হেক্সাডেসিমেল) প্রত্যেকটি অংকেকে তার স্থানীয় মান দিয়ে গুন করতে হবে।
ধাপ ২: গুনফল গুলো যোগ করলেই সংশ্লিষ্ট সংখ্যাটির রুপান্তরিত সমতূল্য দশমিক মান পাওয়া যাবে।
যেকোন সংখ্যা পদ্ধতিতে হতে দশমিক সংখ্যার রূপান্তর করার জন্য স্থানীয় মান নির্ণয় করা জরুরী।
স্থানীয় মান নির্ণয় পদ্ধতি।
যেকোন সংখ্যা পদ্ধতিতে কোন সংখ্যার সর্ব ডানের অংকের স্থানীয় মান ১। যেমন দশমিক সংখ্যা (২৭৩৪)১০ এ ৪ এর স্থানীয় মান ১ (১০০)। প্রতি ঘর বামে স্থানীয় মান ঐ সংখ্যা পদ্ধতির বেজ বা ভিত্তির সমগুন বৃদ্ধি পায়। দশমিক সংখ্যা (২৭৩৪) এ ৩ এর স্থানীয় মান ১০= (১০)১, ৭ এর স্থানীয় মান ১০০= (১০)২, ২ এর স্থানীয় মান ১০০০= (১০)৩। যেহেতু দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির বেজ ১০ তাই স্থানীয় মান প্রতি ঘর বামের অংকের স্থানীয় মান দশ গুন বৃদ্ধি পায়। অর্থ্যাৎ প্রতি স্থান বামে সংখ্যা পদ্ধতির বেজের ০১ ঘাত করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাইনারী সংখ্যার ক্ষেত্রে প্রতি ঘর বামে স্থানীয় মান ২ গুন করে অর্থ্যাৎ ২ এর এক ঘাত করে বৃদ্ধি পাচ্ছে, কারন বাইনারী সংখ্যার বেজ দুই।
আলোচনায় দেখা যায় প্রতি ঘর বামে স্থানীয় মান ঐ সংখ্যা পদ্ধতির বেজের ১
(এক) ঘাত করে বৃদ্ধি পায়।
উদাহরন: (১০১১)২ বাইনারী সংখ্যাটিকে দশমিক সংখ্যায় রুপান্তর।
= ১×২৩+
০×২২+ ১×২১+ ১×২০
= ১×৮+ ০×৪+ ১×২+ ১×১
=৮+০+২+১
=১১
অতএব (১০১১)২ = (১১)১০
No comments:
Post a Comment
Thank for your comment